সম্প্রতি অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমগ্র দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধসহ সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষকদের টার্গেট করে ধর্ম অবমাননার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হেনস্তা করার প্রতিবাদে আজ ৯ এপ্রিল বিকাল ৩টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন শেষে ঢাবির রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহীন সিকদার। আরোও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, ভাস্কর্য শিল্পী রাশা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, “সম্প্রতি অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমগ্র দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। নওগাঁসহ সমগ্র দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষকদের টার্গেট করে ধর্ম অবমাননার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হেনস্তাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তির দোসররা সারা দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর চেষ্টা করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে ধর্ম অবমাননার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে এরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এরা দেশ ও জাতির শত্রু। এরা আজও পর্যন্ত বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি। স্বাধীন ও মুক্ত চর্চার কেন্দ্র টিএসসিকে এরা সাম্প্রদায়িক কেন্দ্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের মেতে উঠেছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দালালদের বিষ দাঁত উপড়ে ফেলবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এদেরকে পার্সেল করে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হবে। কারণ এরা বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাবি কখনোই জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতে পারে না। ঢাবি প্রশাসনের নিকট আহবান, অবিলম্বে এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট হস্তান্তর করুন। অন্যথায় উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহীন সিকদার বলেন, “দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে ধর্ম অবমাননার ছুতোয় গ্রেপ্তার ও জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।”
সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, “অবিলম্বে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি, তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক লতা সমাদ্দারকে হেনস্থা ও নওগাঁয় শিক্ষক আমোদিনী পালকে দায়ি করে হিজাব পরার ঘটনা নিয়ে গুজব ছড়ানোর মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সাথে জড়িত জামাত-বিএনপির দোসরদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল বলেন, “সাম্প্রদায়িক কূপমণ্ডূকটা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে গ্রাস করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো হচ্ছে। অবিলম্বে বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহাল করে দেশকে পরিচালনা করতে হবে। অন্যথায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে না।”
ভাস্কর্য শিল্পী রাশা বলেন, “একজন শিক্ষক যদি ক্লাসে মুক্তভাবে কথা বলতে না পারেন, ক্লাসে যদি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয় তা খুবই দুঃখজনক। ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিপদের মধ্যে ফেলা হয়েছে। একজন শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের জন্য এভাবে কারাগারে নিয়ে যাওয়ায় সমাজে অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। মৌলবাদী গোষ্ঠী এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে ধর্মীয় বিষবাষ্প ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এদেরকে এখনি রুখে দিতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ বলেন, “একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ বিনির্মাণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তাঁর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেই উদারনৈতিক সমাজ গঠনে মনোনিবেশ করেছেন। এই সময়ে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াতে চায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমগ্র দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।”