বরিশালের মুলাদীতে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় হেলাল বেপারীর ভাই কামাল বেপারী এবং তয়কা গ্রামের মোতালেব হোসেনের ছেলে মমিন হোসেন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা।
সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের উত্তর পশ্চিম বালিয়াতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বাটামারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলম বেপারীকে গ্রেফতার করেছে।
নিহতরা হলেন- সফিপুর ইউনিয়নের উত্তরপশ্চিম বালিয়াতলী গ্রামের মৃত আব্দুল জলিল কবিরাজের ছেলে আলমগীর কবিরাজ এবং বাটামারা ইউনিয়নের পূর্ব তয়কা গ্রামের সেলিম বেপারীর ছেলে হেলাল বেপারী।
আলমগীর কবিরাজের স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, ২০১৬ সালে একটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পরে আলমগীর কবিরাজ এলাকা ছেড়ে চলে যায়। গত মার্চে তিনি এলাকায় ফিরলে উত্তর বালিয়াতলী গ্রামের দাদন হাওলাদার ও তাদের লোকজন বিভিন্ন হুমকি দেয়। এর মধ্যে কয়েক দিন আগে পার্শ্ববর্তী তয়কা-টুমচর গ্রামের আকন গ্রুপ ও হাজি গ্রুপের মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আলমগীর কবিরাজ আকন গ্রুপের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় হাজি গ্রুপের আলম বেপারী ও তাদের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, আলম বেপারী সোমবার ২-৩ টি ট্রলারে করে বহিরাগত লোক নিয়ে তয়কা-টুমচর এলাকায় আসেন। তাদের সঙ্গে উত্তর বালিয়াতলী গ্রামের দাদন হাওলাদারের লোকজন যুক্ত হয়। ৫০-৬০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ও হাতবোমার বিস্ফোরণ করে আলমগীর কবিরাজ, কামাল বেপারী, হেলাল বেপারীসহ অন্যান্য লোকজনের ওপর হামলা চালায়। প্রাণভয়ে আলমগীর কবিরাজ দৌড়ে নিজের বাড়িতে পার্শ্ববর্তী সমীর কবিরাজের লাকড়ির ঘরে খড়ের গাঁদায় লুকায় এবং হেলাল বেপারী সমীর কবিরাজের ঘরের মধ্যে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা সেখানে পৌঁছলে সমীর কবিরাজের স্ত্রী হেলাল বেপারীকে বের করে দিলে তাকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন প্রতিপক্ষরা। একই সঙ্গে লাকড়ির ঘরের খড়ের গাঁদার মধ্যে আলমগীর কবিরাজকে টেঁটা ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তারা।
স্থানীয়রা জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দিনদুপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে উত্তর বালিয়াতলী গ্রামের আনিচ হাওলাদারকে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডে আলমগীর কবিরাজ ও তার লোকজন নেতৃত্ব দিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনায় আনিচ হাওলাদারের ভাই দাদন হাওলাদার বাদী হয়ে আলমগীর কবিরাজ, হেলাল বেপারী, কামাল বেপারীসহ ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছিল। মামলার পর থেকে আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন। চলতি বছর মার্চ মাসে আলমগীর কবিরাজ লোকজন নিয়ে এলাকায় ফিরে আসলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এছাড়া তয়কা-টুমচর এলাকায় আকন ও হাজি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বে একাধিকবার হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া থানা পুলিশ, ফাঁড়ি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ এলাকায় অবস্থান করছেন।
মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তুষার কুমার মণ্ডল বলেন, হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউপি সদস্য আলম বেপারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া সন্দেহভাজন আরও ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।
বরিশাল পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তয়কা-টুমচর ও বালিয়াতলী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছিল। সোমবারের ঘটনায় পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পুলিশের বিরুদ্ধ অভিযোগ থাকলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ পেলে মামলা এবং দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।