উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল তিস্তা নদীর ওপর দিয়ে হবে সেতু। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ও আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে এখন বাস্তব রূপ নিতে যাচ্ছে সেই তিস্তা সেতু। ইতোমধ্যে সেতুটির প্রায় ৭৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বাকী নির্মাণ কাজ।
এই সেতুটিকে ঘিরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার অ্যাকসেস সড়ক উন্নয়ন, সংশ্লিষ্ট সড়কে ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, মাটির কাজ এবং জমি অধিগ্রহণসহ গোটা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। ৩১ স্প্যান বিশিষ্ট মূল সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সেতুর দুই পাশে নদী শাসনের কাজ, এপার্টমেন্ট নির্মাণ, ৩০টি পিলার ও ১৫৫টি গার্ডার স্থাপন কাজ করা হচ্ছে।
জানা যায়, সৌদি সরকারের অর্থায়নে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর খেয়াঘাট এলাকায় এক হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ ও ৯.৬ মিটার প্রস্থ এই সেতুটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। দু’পাশে এক কিলোমিটার করে অ্যাপ্রোচ সড়কসহ মূল সেতুটি নির্মাণে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩৬৭ কোটি ৯৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
ব্রিজটি নির্মান কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় এলজিডি সুত্রে জানা যায়, সেতু পয়েন্ট থেকে বেলকা বাজার হয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদর, পাঁচপীর বাজার থেকে ধর্মপুর হয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলার হাটলক্ষীপুর বাজার থেকে সাদুল্লাপুর উপজেলা শহর হয়ে ধাপেরহাট দিয়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে সংযোগ। সুন্দরগঞ্জের শোভাগঞ্জ বাজার থেকে পাঁচপীর বাজার পয়েন্ট, মাঠেরহাট থেকে বড়ুয়াহাট ওয়াপদা বাঁধ, মাঠেরহাট থেকে সদর উপজেলার কামারজানি বন্দর সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান আছে।
এসব সড়ক ১৮ মিটার প্রশস্তে উন্নীত করা হচ্ছে। এজন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই সড়কগুলোতে নতুন করে ৫৮টি বক্স কালভার্ট এবং ৯টি আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৯৬ মিটার দীর্ঘ একটি, ৪৮ মিটার দীর্ঘ দুটি, ২০ মিটার দীর্ঘ দুটি, ১৬ মিটার দীর্ঘ একটি এবং ১২ মিটার দীর্ঘ ৩টি সেতুর নির্মাণের কাজ চলছে।
সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে কুড়িগ্রামের চিলমারী, উলিপুরসহ ৫টি উপজেলা এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর ও সদর উপজেলার লাখ লাখ মানুষের রাজধানীসহ পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষি পণ্য এবং অন্যান্য সামগ্রী সরাসরি বাজার জাতের দ্বার উন্মোচিত হবে।
সরেজমিনে সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দিন রাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীরা। নির্মান কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, যে ভাবে দ্রুত গতিতে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ চলছে, আমরা আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার লেবু জানান, সুন্দরগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ও প্রত্যাশার এই তিস্তা সেতু নির্মাণকাজ শেষ হলে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য আসবে। কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে অন্তত ১০০ কিলোমিটার।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম জানান, তিস্তা সেতুসহ গোটা প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করাটা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। পাইলিং এর কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মূল সেতুর ৩০টি পিলারসহ ক্যাপ স্থাপন, ১৫৫টি গার্ডারের মধ্যে ৭৫টির সংযোজন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলোরও কাজ চলছে। অপরদিকে ৩১টি স্প্যানের মধ্যে ১৪টি স্প্যান স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, এলাকাবাসীর দাবির মুখে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ঘাট থেকে তিস্তা নদীর ওপর দিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত এক হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।